হিন্দু বিবাহ হলো হিন্দু ধর্মানুসারীদের জন্য এক পবিত্র সামাজিক ও ধর্মীয় বন্ধন, যা নারী ও পুরুষের মধ্যে একটি পারিবারিক জীবন গঠনের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়। হিন্দু বিবাহ শুধু একটি সামাজিক চুক্তি নয়, এটি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যা ধর্মগ্রন্থ, মন্ত্র ও রীতিনীতি অনুসরণ করে সম্পন্ন হয়।
হিন্দু বিবাহ কি?
হিন্দু বিবাহ হলো দুইটি আত্মার মিলন, যা শুধু এই জীবনের জন্য নয়, বরং পরবর্তী জীবনেও একে অপরের সঙ্গী হওয়ার অঙ্গীকার। এটি ধর্ম, কর্ম এবং পারিবারিক দায়িত্ব পালনের জন্য একত্রে পথচলার সূচনা।
হিন্দু বিবাহ কিভাবে হয়?
হিন্দু বিবাহ সাধারণত কয়েকটি ধাপে বা রীতিতে বিভক্ত থাকে। এখানে মূল ধাপগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো:
- পাত্র-পাত্রী নির্বাচন ও কুণ্ডলী মিলান
বিয়ের পূর্বে পাত্র ও পাত্রীর জন্মকুণ্ডলী মিলিয়ে দেখা হয়, যা জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে মানানসই কিনা। - পাকা কথা (পাকা দেখা বা আশীর্বাদ)
দুই পরিবার একমত হলে একটি প্রাথমিক অনুষ্ঠান হয়, যেখানে বিয়ের দিন নির্ধারণ হয়। - গায়ে হলুদ (হলুদ অনুষ্ঠান)
বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর গায়ে হলুদ মাখিয়ে তাদের বিশুদ্ধ করা হয়। - বিয়ের মূল অনুষ্ঠান
এটি পুরোহিত বা ব্রাহ্মণের দ্বারা পরিচালিত হয়, যেখানে বৈদিক মন্ত্র, অগ্নিসাক্ষী, ও নানা রীতিনীতি পালন করা হয়।
হিন্দু বিবাহের ধর্মীয় রীতিনীতি (মূল আচারগুলো):
১. কন্যাদান
পিতার দ্বারা পুত্রবধূকে বরকে অর্পণ করা হয়। এটি খুব পবিত্র একটি রীতি।
২. মঙ্গলসূত্র পরানো ও সিঁদুর পরানো
বর কনের গলায় মঙ্গলসূত্র পরান এবং সিঁথিতে সিঁদুর পরান। এটি বিবাহের গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন।
৩. সপ্তপদী (সাত পাক/ফেরা)
বর-কনে অগ্নিকে সাক্ষী রেখে সাতবার হোম যজ্ঞের চারপাশে ঘোরেন। এই সাতটি পদক্ষেপ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করে দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন দিককে।
৪. হোম ও যজ্ঞ
অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিয়ে দেবতাদের আহ্বান করা হয় ও আশীর্বাদ চাওয়া হয়।
৫. আশীর্বাদ গ্রহণ
শেষে আত্মীয়-স্বজন ও ব্রাহ্মণদের কাছ থেকে নবদম্পতি আশীর্বাদ গ্রহণ করেন।
হিন্দু বিবাহের উদ্দেশ্য:
- ধর্ম (ধর্মপালন)
- প্রজা বা সন্তান উৎপাদন
- কাম বা ইচ্ছা পূরণ
- মোক্ষ বা আত্মিক মুক্তির পথে সহায়তা
প্রতিটি অঞ্চল ও উপধর্ম (যেমন শাক্ত, বৈষ্ণব, শৈব) অনুযায়ী কিছু পার্থক্য থাকতে পারে, তবে মূল রীতিনীতিগুলো মোটামুটি একই থাকে।
আপনি যদি চান, আমি বাংলাদেশের হিন্দু সমাজে প্রচলিত বিবাহ রীতিগুলো নিয়েও বিস্তারিত বলতে পারি।